ঢাকা,রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

তনু হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল কুমিল্লা

tanu-1_1ডেস্ক নিউজ :

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে কুমিল্লা নগরী। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে তনুর সহপাঠীরা একটি মিছিল বের করে। পরে ১০ টার পর থেকে কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র পূবালী চত্বরে দল মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা জমায়েত হয়ে তনুর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করছে। এসময় কুমিল্লা জেলার সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বলেও তিনি জানান। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো: হাসানুজ্জামাল কল্লোল এবং পুলিশ সুপারের নিকট স্মরকলিপি প্রদান করে।

এ যেন সেই উত্তাল মার্চ, যে মার্চে বাঙ্গালীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য তেমনি ভাবে তনু হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে কুমিল্লা কান্দিরপাড় পূবালী চত্ত্বরের রাজপথে নেমে আসে সর্বস্তরের মানুষ ।

“খাওয়া নাইকো, নাওয়া নাইকো, নাইকো মুখে হাসি, এক দফা এক দাবি চাই নর ঘাতকের ফঁসি” আমরা সবাই তনুর ভাই তনু হত্যার বিচার চাই, এমনই সব বজ্রকণ্ঠে শ্লোগানে বিচার দাবি করে সর্বসস্তরের মানুষ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কুমিল্লার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হতে থাকে হাজারো শিক্ষার্থী সহ সর্বস্তরের মানুষ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাট্যসংঠন সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।

কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ্ব মো: ওমর ফারুক মানববন্ধনে অংশগ্রহন করে বলেন, সবার মতো আমিও তনু হত্যাকারীদের বিচার চাই সেনাবাহিনীদের এলাকার নিরাপত্তার বেষ্টনীর মধ্যে তনুকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এ হত্যাকা-ের সাথেই যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি মাধ্যমে প্রমান করে দিতে হবে যেন ভবিষ্যতে এমন নেক্কারজনক কর্মকা- কেউ করার সাহস না পায়।

Tonu20160322070359কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রব নিজ উদ্যোগে মানববন্ধনে অংশগ্রহন করে বলেন, এ হত্যাকা- আমার বিকেকও নাড়া দেয়, তনু হত্যাকারীদের সনাক্ত করা চেষ্টা করছি, তাঁর পরিবারে সাথে আমার বুধবার রাতে কয়েকঘণ্টা আলোচনা করেছি। আমাদের পুলিশ বাহিনীর সাথে অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পুলিশ সুপার সহ উধ্বর্তন কর্মকর্তা ও ঘটনা নিয়ে কাজ করছে। বিক্ষোভ কারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আমরা আশা করি আপনারা যেন আর কষ্ট করে আন্দোলন করা না লাগে তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, হত্যাকা- ঘটনার এতদিন অতিক্রম হলেও প্রশাসন নিরব ভূমিক পালন করছে। তনু হত্যাকারীদের ফঁসিতে না ঝুলিয়ে রাজপথ থেকে কেউ আমাদের সরাতে পারবে না।

ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা জানান, আশা করি প্রশাসন তনু হত্যাকারীদের অতিদ্রুত গ্রেফতার করবে তা না হলো আমারা কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবো। আরেক শিক্ষার্থী জানান, তনু হত্যাকারীদের গ্রেফতার না হলে কুমিল্লাসহ দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন জোয়ার উঠবে। ইতিমধ্যে সমগ্র দেশবাসী হত্যাকরীদের বিচারের দাবিতে একত্রিত হয়েছি।

তনু’র সহপাঠীরা বলেন, প্রশাসন যদি তনু হত্যাকারীরে গ্রেফতার না করে নিরব ভূমিকা পালন করে তাহলে আপানাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ভিক্টোরিয়া কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, রেল লাইন সহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ডিসি অফিস অবরোধ, থানা অবরোধ, শিক্ষকদের কর্মবিরতী সহ প্রয়োজন হলে আমরণ অনশন করার সিদ্ধান্ত নিবো।

ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রিপন চৌধুরী আপন বলেন, ‘আমরা তনু হত্যার বিচার চাই। আমাদের বন্ধু-সহপাঠী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ঘটনায় আজকে সারা দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। কান্দিরপাড়ে আমরা বিক্ষোভ করছি। এতে অংশ নিচ্ছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া কুমিল্লার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরাও রয়েছে এই আন্দোলনে।’

আন্দোলনকারীরা জানান- রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তখন আর জনসাধারণের কী করার থাকতে পারে। বেশ কিছু বছর আগে দিনাজপুরে পুলিশ ভ্যানে ইয়াসমিন ধর্ষণের বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্য তৈরি করে। তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নারী নির্যাতনের বিষয়টি খুব রুঢ় ভাবে সামনে আসে। তারপর আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে কতিপয় দূষ্কৃতকারীর দ্বারা। কার কি বিচার হয়েছে নাগরিকরা সেই বিষয়ে অন্ধকারেই।

যদিও অপরাধী চিহ্নিত না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না কুমিল্লা সেনানিবাসে সোহাগীকে আসলে কে বা কারা ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। তবে আন্দাজ তো অন্তত করা যায় কিছুটা। সেনানিবাস এলকায় এমনিতেই সর্বসাধারণের তেমন চলাফেরার অধিকার থাকে না। যারাও বা প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করে, সেই সংখ্যা খুব সীমিত এবং তারা কখন কোন কাজে সেনানিবাসে আসে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। বাইরের লোক আসুক আর নাই আসুক সেনানিবাস এলাকায় কোনো নারী ধর্ষিত হলে বা খুন হলে সংশ্লিষ্ট কেউই সেই দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না। যৌক্তিকভাবেই সন্দেহের প্রথম তীর সংশ্লিষ্টদের দিকেই যায়। এটাই বড় লজ্জার।

এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বিশ্বরোড মোড় দেড় ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এরই মধ্যে এই ঘটনায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন তনু হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (২০ মার্চ) রাতে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের অলিপুর এলাকায় একটি কালভার্টের কাছ থেকে পুলিশ নিহত তনুর লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ বলেছে, ধর্ষণের পর নির্মমভাবে তনুকে হত্যা করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: